স্বদেশ ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে টানা আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী ইতোমধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। নেতাকর্মীদের এই মুক্তি বিএনপিতে এক ধরনের স্বস্তি এনে দিয়েছে। জানা গেছে, নেতাকর্মীদের মুক্তি প্রক্রিয়া যাতে বিলম্বিত না হয়, সে জন্যই নির্বাচনোত্তর আরো ধড়পাকড় হতে পারে এমন কোনো কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি।
জাতীয় নির্বাচনের দুই মাস আগে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের জেরে ব্যাপক পুলিশি অ্যাকশন শুরু হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের হিড়িক পড়ে যায়। ২৮ অক্টোবরের পর দিনই গ্রেফতার হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বহু নেতা গ্রেফতার হন। বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক হাজার ৬৪৫টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয় ২৫ হাজার ৭১১ জনকে।
তবে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীদের জামিন প্রক্রিয়া এগোতে থাকে। দলটির সিনিয়র প্রায় অধিকাংশ নেতা ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস কারাবন্দী থাকার পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এর চার দিন পর কারামুক্ত হন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস। বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাই ইতোমধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কিছু কিছু নেতা জামিন পেতে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের একদফা দাবিতে জনগণ রাজপথে নেমে এসেছিল। সরকার যখন দেখেছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একতরফা আরেকটি নির্বাচন করা আর সম্ভব হবে না, তখনই ২৮ অক্টোবরের নাটক মঞ্চস্থ করে বিএনপি নেতাদের মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার শুরু করে। সারা দেশে তারা ৩০ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। নির্বাচনের আগে তারা অন্তর্বর্তীকালীন জামিন প্রক্রিয়া পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছিল। এখন সরকারের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাওয়ায়, পরিবেশ স্বাভাবিক দেখাতে বিএনপির নেতাদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে।
আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, নেতাকর্মীদের মুক্তি পাওয়া অবশ্যই স্বস্তির দিক। তবে বিএনপি আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন চলমান থাকবে।
জানা গেছে, গত ছয় মাসের টানা আন্দোলনে সাারা দেশের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা-গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় বিএনপি মাঠের কর্মসূচিতে ফিরতে সময় নিচ্ছে। নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে নতুন করে কর্মসূচির কথা ভাববে দলটি। সামনে রমজান মাসে সাংগঠনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। হাইকমান্ডকে ১০ বিভাগে কারা মুক্ত নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ।
নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি ভাঙার নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনে নিতেও নানা তৎপরতা চালানো হয়েছে। কিন্তু শত অত্যাচার, নির্যাতন, প্রলোভন সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা ছিলেন আপসহীন। সরকারের উদ্দেশ্যও সফল হয়নি। এ কারণেই নেতাকর্মীরা দলের আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা পাওয়ার যোগ্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বড় কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না তারা। তবে সংগঠন চাঙ্গা করতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়ে কারামুক্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে এর মধ্য দিয়ে সংগঠন আরো চাঙ্গা হতে পারে। এর পাশাপাশি উপযুক্ত সময়ে দল পুনর্গঠনের কাজও শুরু হবে।
হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএনপির শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যে কারামুক্ত নেতাদের বাসায় গিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ শুরু করেছেন। একই সাথে আন্দোলনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পাশেও থাকবে বিএনপি।